Skip to main content

বাংলার ৫ এবং...


এখন কেমন হড় হড় করে সব লিখে ফেলছি সবাই ! বাংলা –ইনরিজি – ১,২,৩...সংখ্যা । কিন্তু সেতো এত্ত এত্ত বছর কলম ঘসে ঘসে তবেইনা ! কিন্তু চিরকালই কি এরকম ছিলো ? না, আলবাত না । এই অক্ষর বা সংখ্যার কিছু বিশেষ বিশেষ চরিত্র ছিলো যারা আমায় বেশ বেগ দিয়েছে ,অপদস্থ করেছে পদে পদে । প্রথমেই যেমন মনে পড়ছে বাংলার ‘৫’ সংখ্যাটি ! এমনিতে এই সংখ্যাটিকে দেখলে মনে হয় নিতান্তই নিরীহ প্রকৃতির ,কোনো সাতে ৫এ থাকেনা ! কিন্তু ওই , যাকে বলে ‘পেটে পেটে’- ইনিও সেরকম । মা ,ইশকুলের দিদিমণি বার বার হাতে ধরে লিখিয়ে দিলেও কি এক অদ্ভুত ফর্মুলায় সেটা কিছুটা কাজুবাদাম ,কখনও বা কমলালেবুর কোয়ার মতো হয়ে যেত – এরহস্য কিছুতেই ভেদ হয়নি । শেষে একটা বুদ্ধি বের করি নিজেই , ‘৬’ লিখে লেজটা জুড়ে দিতে থাকলাম মাথার সঙ্গে – একবারে ল্যাজামুড়ো যাকে বলে । এতে দেখলাম বেশ কাজ হলো । গম্ভীর হলেও কানমলা থেকে দিদিমণিরা বিরত হলেন । সত্যি বলতে কি এখনও ওই থিওরি চালিয়ে যাচ্ছি । এবার আর এক জটিল চরিত্রের কথায় আসা যাক , সেটি হলো বর্গীয় ‘জ’ , আরও জ্বালা যদি এর সঙ্গে অন্য অক্ষর যুক্ত হয় ! যেমন ‘জ্ঞ’। সেই একই ব্যাপার ! ‘জ’ লিখে পিঠে একটা পুঁটলি এঁকে দিয়ে কাজ চালিয়ে গেলাম চিরকাল । ‘স’ আর ‘ঘ’এও চিরকাল আমি গুলিয়ে ফেলতাম । আমি যতই বলি ওটা ‘স’ ...দন্তের-স ...কেউ বিশ্বাস করেনা ! আসলে দোষটা আমার অক্ষর আঁকার ত্রুটির ,শেষ ফর্মুলা হলো এরকম ইংরেজির ‘S’ লিখে পাশে একটা দাঁড়ি টেনে আড়াআড়ি জুড়ে মোটামুটি ‘স’ লেখাটা ম্যানেজ করা শেখানো হলো আমায় । এরকম ফর্মুলার গল্প নিশ্চয়ই অনেকেরই আছে । কারণ এটা কিন্তু হলফ করে বলাই যায় সত্যি করে ছাপা হরফের হুবহু আমরা লিখি কি ! লিখিনা । এবং এই না-লেখার সবারই নিজের নিজের লিখন-পদ্ধতি আছে । যার লিখন পদ্ধতি দৃষ্টিনন্দন হলে আমরা তার ‘হাতের লেখা ভালো’ বলি । এটা কিন্তু ভারি অন্যায় । অনেকটা ওই ‘ফর্সাকরে’ সুন্দরকরে মেয়েটা/ছেলেটা বলার মতোই – মানে ফর্সা হলেই সে সুন্দর ! আহা , আমি কি বলি , যার লেখা কিছু কিছু দিকভ্রান্ত ( ওই যাকে ‘কাগের ঠ্যাং-বগের ঠ্যাং’ বলে আমরা অপমান করি আরকি) সেওতো নিজের মতোই লিখছে ! হয়তো তেমন ‘সুন্দরকরে’ নয় । আমার এক বন্ধু ইতিহাস পরীক্ষায় ৮ থেকে ১০টা পাতা নিত ,যেখানে আমি বড়জোর দুটো – কারণ তার সহজ থিওরি ছিলো – লেখা বড় বড় হতে হবেই যাতে করে এগজামিনার সবটা ঠিক ঠাক পড়তে পারে(বা ক্লান্ত হয়ে না পড়েই নম্বর দিয়ে দেয়) । অবশ্য এর পিছনে আমাদের স্কুল সময়ের একটা চাপা কারণও ছিলো যা ও চেপে যেত – সেটা হচ্ছে বিশেষ করে ইতিহাস পরীক্ষায় খুব লিখতে হয় , তাই বুঝতে হবে যে যত পাতা নিচ্ছে সে ততো ভালো পরীক্ষা দিচ্ছে । এই ব্যাপারটায় আমি পিছিয়েই থাকতাম ,কারণ আমি স্বভাব কুঁড়ে । কি করে নম্বর পেতাম কম লিখেও সে অন্য রহস্য,অন্য গল্প আজ থাক ।
ইংরেজির অক্ষরেরা তুলনায় কম কম জটিল চরিত্রের হলেও কম যায়না , এরাও বিস্তর ভুগিয়েছে । যেমন ‘G’ ,  সে কি সমস্যা ! গোল পাকিয়ে আবার মাঝে একটা খোঁচ দিতে গিয়ে একদম জিলিপি ! ছোট হাতের ‘b’ আর ‘d’ পেটটা হামেশাই উলটো হয়ে যেত ,বেশ কিছুদিন লেগেছে রপ্ত করতে । ছোটো ‘a’এও কিছু কম ছিলো না ! যেমন দেখাচ্ছে ওরকমতো লিখতাম না ,গোল পাকিয়ে একটা ছোট্ট লেজ টেনে দিতে হতো ডানদিকে নিচে , ছোট ‘o’ ক্ষেত্রে আবার লেজবিহীন ব্যবস্থা ।  এবার ‘o’ এর সঙ্গে অন্য অক্ষর জুড়তে গেলেই বিপত্তি যেইনা একটা টান দিয়েছি সেটা হয়ে গেল ‘a’! ব্যাস বানানভুল !  চারে লাইনের সেই ইংরেজি খাতা , মাঝে লাল দুপাশে নীল । কিছু অক্ষর লিখতে হবে মাঝের দুলাইনে ,আর কিছু অক্ষরের লেজ-মাথা ছোঁবে ওপরের ও নিচের লাইনেও খনওবা মাঝে ও শুধু ওপরে । বেশ কঠিন ব্যাপার রপ্ত করা । যাইহোক , এভাবেই লিখতে লিখতে লেখা শিখে গেলুম । কিন্তু এখন শেখাতে গিয়ে টের পাচ্ছি কি কঠিন কাজ এটা । বিচিত্র আকারের বিভিন্ন অক্ষর , তাদের আবার আরও বিচিত্র প্রয়োগ ক্ষেত্র বিশেষে জিভের উচ্চারণের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে লিখে ফেলা নেহাত কম পরিশ্রম নয় একটা নতুন অক্ষর চিনতে থাকা ছোট্ট মগজের পক্ষে , তার কাছে এই বিচিত্র আঁকিবুকির বর্ণমালা চিনে শব্দ গঠন করা ,বা চেনা শব্দগুলি অক্ষরে রূপান্তর করা কম কঠিন কাজ নয় । আমরা ঘষটে ঘষটে রিম রিম কাগজের অন্ত্যেষ্টি করে এখন বেজায় অহংকারী হয়েছি –ভাবছি বড্ড দেরী করছে অক্ষর লিখতে , শব্দ গঠন করতে । ঠ্যালাটা বুঝতাম যদি কোনোদিন কোনও ভিনগ্রহের প্রাণীরা এসে আমাদের অপহরণ করতো ,নিয়ে যেত তাদের গ্রহে ! আর মস্তিষ্ক প্রক্ষালন যন্ত্রে চাপিয়ে বলতো ‘ব্যাটা আমাদের  অ আ ক খ শেখ তাড়াতাড়ি ...’। কচি মগজের কাছে এসব ভিনগ্রহের বিচ্ছিরি ব্যাপার স্যাপার ছাড়া আর কি !

এসব নিয়ে ভাবনায় কি ঘুম আসে! যাহোক একসময়ে ঘুমিয়ে পড়লাম সেদিন । মাঝরাতে দেখলাম জানলায় কারা যেন উঁকি দিচ্ছে বার বার ... দেখলাম ব্যাঁকামুখো বাংলার ৫ , ইংরেজির জটিল ‘G’, আরও সব কারা যেন দাঁত বের করে ডাকছে আর বলছে ‘ আয় ইশকুল যাবি ?...’  ধড়ফড় করে ঘুম ভেঙে গেলো , গলগল করে ঘামছি, ঐ দুঃস্বপ্ন দেখলে যেমন হয় আরকি !   .

Comments

  1. অসাধারণ। আমি d লিখে হাত ওপরে দিতে গিয়ে ভুলে গিয়ে এখনও g লিখে ফেলি। টাইপের সময় ভাবলাম আর সেসব হবে না। কিন্তু সেখানেও এক ঘর কেস। দুটো অক্ষরই F -এর দুদিকে। ফলে তাড়াহুড়োয় এখনও......

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

অধর্ম

[ আমরা কেউ ধর্মে বিশ্বাস করি, কেউ হয়তো ধর্মকে পরিত্যাগ করিনি, কিন্তু ধর্ম নিয়ে মাথাও ঘামাই না, কেউ কট্টর নাস্তিক আবার কেউ বা ধর্মনিরপেক্ষ - কিন্তু একটা জায়গায় আমাদের গভীর মিল আছে, আমরা সবাই বাকস্বাধীনতায় প্রবলভাবে বিশ্বাসী। আর সেই জন্যই রাজীব হায়দার, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান, অনন্ত বিজয় দাস, নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়রা যে কথাগুলো বলতে চেয়ে প্রাণ হারালেন, সে কথাগুলো যাতে হারিয়ে না যায় তার জন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাব। ওঁদের সঙ্গে আমাদের মতাদর্শের মিল আছে কি নেই সেটা এই মুহূর্তে অবান্তর প্রশ্ন। কিন্তু মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সমর্থনে সারা বিশ্ব জুড়ে একাধিক ব্লগার কিবোর্ড নিয়ে বসেছেন, সেই লেখাগুলো সঙ্কলিত করে দেওয়া হল পাঠকদের জন্য - তালিকাটি দেখা যাবে এই ব্লগপোস্টের শেষে।]    কি বলি বলুন তো  !এমন কিছু নতুন তো বলতে পারছি না যা আগে শোনেননি বা পড়েননি । এই নির্দিষ্ট  বিষয় নিয়ে হাজার হাজার শব্দ উচ্চারিত হয়েছে , লেখা হয়েছে । কেউ কিছু একটা লিখবে ,তার মতে , তার বিশ্বাস থেকে কিংবা বলবে- অমনি ঘাড়ে পড়বে 'চাপাতি' ! বেশ নাম ডাক হয়েছে ইদানীং এই যন্ত্রটির । কুপিয়ে দিয়ে তবেই শান্তি স্

নামকে ওয়াস্তে ...

বন্ধুর বাবার নাম ‘মোনালিসা’ !! কি ! হেঁচকি উঠলো তো ? ...কিংবা পাড়ার দুই যমোজ বোনের নাম ‘ জেরক্স’  ! এই জেরক্সের ব্যাপারটা বুঝলেও  বাবার নাম মোনালিসা –এটা একটু দুর্বোধ্য ঠেকতে বাধ্য । ব্যাপার হচ্ছে –সিম্পল – বন্ধুর বাবার পার্মানেন্ট মুখভঙ্গিটা এমনই যে কিছু দাঁত সব সময়ে বেড়িয়ে থাকে ,হঠাৎ করে কেউ দেখলে বিভ্রান্ত হতে বাধ্য – উনি বুঝি হাসছেন ! কিন্তু ওনার এটাই গড়পরতা এক্সপ্রেসন ! – এই হাসি -হাসিনয় রহস্যময়তার জন্যই – মোনালিসা নামকরন । কে কবে এই যথার্ত নামকরন করেছিলো আজ আর মনে নেই ।  সব বাবাদেরই একটা করে গোপন নাম ছিলো যা একমাত্র বন্ধু মহলেই ব্যাবহার করা হতো । যেমন – ‘স্মার্ট বয়’ ‘উৎপল(দত্ত)’, ‘জেমস বন্ড’ , ‘অমরীশ পুরি’ , ‘দিলীপকুমার’, ‘নাকাবন্দি’ ...আরও কত । ছিলো বন্ধুদেরও নাম ,যেমন ‘আঁতলা (আঁতেল)’ ‘টাকলা’ ‘লেটুয়া(ল্যাটা)’ ‘কাতলা’ , ‘এল কে (লাথখোর)’... আরও কত কি ! সব কি আর মনে আছে ছাই । স্কুলে স্যারেদেরও বেশ কিছু নাম ছিলো বেশ জনপ্রিয় যথা ‘ব্রেকড্যান্স’(নেচে নেচে নানান অঙ্গভঙ্গী করে পড়াতেন বলে) বা ‘মুকেশ’(নাকি সুরে পড়াতেন বলে) **এখন হলে হয়তো ‘হিমেশ’ হতো !! না না! এসব নামকরন স্রেফ ফাজ

গ্রীষ্মযাপন

                                            মাথার ওপর সিলিংফ্যানটাকে কেউ যেন টেনে ধরেছে , ঘুরছেই না যেন ! কেমন মিন মিন করে পাক খাচ্ছে ! কিছুক্ষন পর ঠিক যা আন্দাজ করেছিলাম তাই – ‘ক্যাঁও ক্যাঁও ’ করে বিচিত্র আওয়াজ করে এবার একদম স্থির হয়ে গেলো পাখা ! সব্বোনাশ ! এদিকে গরমে বস্ত্র উন্মোচন কত্তে কত্তে অন্তিম বস্ত্রখন্ডটিতে এসে পড়েছি । এরপর আর যাওয়া যাবে না ,গেলে তা সভ্যতার পরিপন্থী হবে ব্যাপারটা । অগত্যা আমাদের গ্রীষ্মকালীন জাতীয় ( সধারনতঃ পুং) পোষাক বারমুডা নামক বিচিত্রদর্শন কটিবস্ত্রটি পরেই ছোটাছুটি – দৌড়া দৌড়ি লাঠি দিয়ে ,ঝুল ঝাড়া দিয়ে পাখাটার ওপর ঝাঁপিয়ে পরলাম – কৃত্রিম উপায় ঘুরিয়ে দিয়ে অনেক সময় চলতে শুরু করে সেই আশায় । অনেকটা ঠেলে গাড়ি স্টার্ট করার মতো । কিন্তু নাঃ ,নট নড়ন চড়ন । এরকম অভিজ্ঞতা আপনাদের হয়েছে কিনা জানিনা ,তবে না হয়ে থাকলে আপনার ভাগ্য প্রসন্ন । এই যেমন সুন্দর করে গন্ধ-সাবান দিয়ে স্নান সেরে গরমে পরার উপযুক্ত হাল্কা রঙএর পোষাক গায়ে চাপিয়েছেন কি চাপাননি – দুর্যোগের মত পাওয়ার কাট ! ব্যাস , কুল কুল করে বিভিন্ন শারীরিক সোঁতা বেয়ে ঘামের ধারা নেমে আসতে শুরু করলো , এমন নয় যে