Skip to main content

নামকে ওয়াস্তে ...


বন্ধুর বাবার নাম ‘মোনালিসা’ !!
কি ! হেঁচকি উঠলো তো ? ...কিংবা পাড়ার দুই যমোজ বোনের নাম ‘ জেরক্স’  !
এই জেরক্সের ব্যাপারটা বুঝলেও  বাবার নাম মোনালিসা –এটা একটু দুর্বোধ্য ঠেকতে বাধ্য । ব্যাপার হচ্ছে –সিম্পল – বন্ধুর বাবার পার্মানেন্ট মুখভঙ্গিটা এমনই যে কিছু দাঁত সব সময়ে বেড়িয়ে থাকে ,হঠাৎ করে কেউ দেখলে বিভ্রান্ত হতে বাধ্য – উনি বুঝি হাসছেন ! কিন্তু ওনার এটাই গড়পরতা এক্সপ্রেসন ! – এই হাসি -হাসিনয় রহস্যময়তার জন্যই – মোনালিসা নামকরন । কে কবে এই যথার্ত নামকরন করেছিলো আজ আর মনে নেই ।  সব বাবাদেরই একটা করে গোপন নাম ছিলো যা একমাত্র বন্ধু মহলেই ব্যাবহার করা হতো । যেমন – ‘স্মার্ট বয়’ ‘উৎপল(দত্ত)’, ‘জেমস বন্ড’ , ‘অমরীশ পুরি’ , ‘দিলীপকুমার’, ‘নাকাবন্দি’ ...আরও কত । ছিলো বন্ধুদেরও নাম ,যেমন ‘আঁতলা (আঁতেল)’ ‘টাকলা’ ‘লেটুয়া(ল্যাটা)’ ‘কাতলা’ , ‘এল কে (লাথখোর)’... আরও কত কি ! সব কি আর মনে আছে ছাই । স্কুলে স্যারেদেরও বেশ কিছু নাম ছিলো বেশ জনপ্রিয় যথা ‘ব্রেকড্যান্স’(নেচে নেচে নানান অঙ্গভঙ্গী করে পড়াতেন বলে) বা ‘মুকেশ’(নাকি সুরে পড়াতেন বলে) **এখন হলে হয়তো ‘হিমেশ’ হতো !!
না না! এসব নামকরন স্রেফ ফাজলামির জন্য নয় কিন্তু ! প্রতিটা নামের পিছনে রয়েছে কাহিনী । বিশেষ করে  সেই ব্যক্তির ভৌগলিক ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট । যেমন মাথা তুলনায় বড় এবং মোটা তাই – কাতলা , বিস্তর লেকচারবাজি এবং বয়স তুলনায় গুহ্যপক্কতার কারনে – আঁতলা ...এরকম আরকি ।  প্রতিটি নামের সঙ্গে জড়িয়ে অমূল্যসব স্মৃতি , সেইসব দিনের-বয়সের যখন ছেলেরা ,বন্ধুরা গভীরভাবে বিশ্বাস করে এভাবে একসঙ্গেই বুঝি থেকে যাবে সবাই চিরকাল ।  যখন যেমন আরকি !
এই নামের ব্যাপারটা যতই মনীষিরা বলুক “...কি এসে যায় !” এসে যায় মশাই ,এসে যায় । বাবা-মা ,দাদু-ঠাকুমা প্রদত্ত জন্মগত নামে নাহলেও অর্জিত নামে আসে । সে কোনো ব্যক্তি হতে পারে ,জায়গা হতে পারে ,জিনিস হতে পারে । যেমন একবার ভেবে দেখুন তো কলকাতা-গোবিন্দপুর- সুতানুটির মধ্যে ‘কলকাতা’ নাহয়ে যদি ‘গোবিন্দপুর’ হতো ! ঠিকানা লিখতেন যদি ‘গোবিন্দপুর – ১৭’ তাহলে কেমন হতো ! ...না মানে একবার ভেবে দেখতে দোষ কি ! ভারতবর্ষকে ‘হিন্দুস্থান’ না বলে সবাই ‘সিন্ধুস্থান’ বলতো তাহলে কেমন হতো ব্যাপারটা ! উত্তম কুমারকে যদি কাল থেকে অরুন কুমার বলতে হয় ? কিংবা দিলীপকুমারকে ‘ইউসুফ’ ! যা তাদের অভিভাবক প্রদত্ত নাম ।  জেরক্স করাতে গিয়ে দোকানে যদি বলেন “ ভাই দুপাতা ফটোকপি করাবো ” দোকানদার নির্ঘাৎ হাঁ করে মুখের দিকে তাকাবে । আবার ‘নেতাজী’ বললে আসমুদ্র হিমাচল একজনকেই চেনে অথচ দেশে ডজন ডজন নেতা ! তেমনই ‘গুরুদেব’ কে? বলে দিতে হবেনা বাঙালী তথা শিক্ষিত ভারতবাসীকে ।
আপনি কি জানেন Demetria Guynes কার নাম ?...আজ্ঞে প্রসিদ্ধ হলিউডি নায়িকা ডেমি মুরের এটাই নাকি আসল নাম । যেমন Allen Konigsberg হচ্ছে স্বনামধন্য উডি এলেন এর সত্যিকারের নাম।
দেওয়ালে ঝোলা ক্যালেন্ডারে সকালে উঠে যদি দেখেন ‘মার্চ’ এর জায়গায় ‘মার্টিয়াস’ বা জুলাইয়ের জায়গায়  ‘কুইনটিলিস’ লেখা কেমন বেকুব বনবেন ! আসলে এগুলই হচ্ছে আমাদের এখনকার মাসের আদি রোমান নাম । এবং এই নামের পিছনেও গল্প রয়েছে । এভাবে কতকিছু ,কতজায়গা ,কতজনের নাম বদলে গেছে ,পাটলিপুত্র কবে যেন ‘পাটনা’ হয়েছে, কনস্টান্টিনোপোল হয়েছে ‘ইস্তানবুল’ ।তাদের পূরানো নাম রয়ে গেছে শুধু ইতিহাসে । নাম বদলে গিয়ে আমাদের কেমন এক বদ অভ্যাস বদলে গেছে খেয়াল করেছেন ? এখন আর কাউকে দক্ষিন ভারতীয় মাত্রেই ‘ম্যাড্রাসি’ বলতে শুনবেন না , কারন ম্যাড্রাসই তো নেই !  
কেজানে ‘কালকূট’ না জন্মালে আমরা সমরেশ বসুকে পেতাম কিনা ! কিংবা নীললহিত যদি সুনীল না হতেন কি হতো !
শুধু কি মানুষ ,জায়গা ইত্যাদি ! উঁহু ...ট্রেনেরও নাম বদলায় ! এইতো ছিলো বেড়াল হয়ে গেলো রুমালের মতো ‘আসানসোল এক্সপ্রেস’ হয়ে গেলো ‘অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস’ ,বেশ একটা নতুন নতুন ভাব এলো ,অনেকে জানলো ,বুঝি নতুন ট্রেন !

মোদ্দাকথা  - নামে আসে যায় – সে অর্জিত হোক আর বর্জিতই হোক , আড়ালে কার্য-কারন থাকে । এখন প্রশ্ন হচ্ছে ইদানিং আমাদের জীবনে অপরিহার্য হয়ে উঠছে কিছু নাম্বার ! যেমন প্যান নাম্বার , মোবাইল নাম্বার , আধার কার্ড নাম্বার ...ইত্যাদি । বেশ একটা উদ্বেগ হচ্ছে , জন্মসুত্রে পাওয়া বা অর্জিত নামের জায়গা দখল করে নেবে নাতো এইসব ‘অর্জিত’ নাম্বার...! 

Comments

Popular posts from this blog

অধর্ম

[ আমরা কেউ ধর্মে বিশ্বাস করি, কেউ হয়তো ধর্মকে পরিত্যাগ করিনি, কিন্তু ধর্ম নিয়ে মাথাও ঘামাই না, কেউ কট্টর নাস্তিক আবার কেউ বা ধর্মনিরপেক্ষ - কিন্তু একটা জায়গায় আমাদের গভীর মিল আছে, আমরা সবাই বাকস্বাধীনতায় প্রবলভাবে বিশ্বাসী। আর সেই জন্যই রাজীব হায়দার, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান, অনন্ত বিজয় দাস, নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়রা যে কথাগুলো বলতে চেয়ে প্রাণ হারালেন, সে কথাগুলো যাতে হারিয়ে না যায় তার জন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাব। ওঁদের সঙ্গে আমাদের মতাদর্শের মিল আছে কি নেই সেটা এই মুহূর্তে অবান্তর প্রশ্ন। কিন্তু মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সমর্থনে সারা বিশ্ব জুড়ে একাধিক ব্লগার কিবোর্ড নিয়ে বসেছেন, সেই লেখাগুলো সঙ্কলিত করে দেওয়া হল পাঠকদের জন্য - তালিকাটি দেখা যাবে এই ব্লগপোস্টের শেষে।]    কি বলি বলুন তো  !এমন কিছু নতুন তো বলতে পারছি না যা আগে শোনেননি বা পড়েননি । এই নির্দিষ্ট  বিষয় নিয়ে হাজার হাজার শব্দ উচ্চারিত হয়েছে , লেখা হয়েছে । কেউ কিছু একটা লিখবে ,তার মতে , তার বিশ্বাস থেকে কিংবা বলবে- অমনি ঘাড়ে পড়বে 'চাপাতি' ! বেশ নাম ডাক হয়েছে ইদানীং এই যন্ত্রটির । কুপিয়ে দিয়ে তবেই শান্তি স্

গ্রীষ্মযাপন

                                            মাথার ওপর সিলিংফ্যানটাকে কেউ যেন টেনে ধরেছে , ঘুরছেই না যেন ! কেমন মিন মিন করে পাক খাচ্ছে ! কিছুক্ষন পর ঠিক যা আন্দাজ করেছিলাম তাই – ‘ক্যাঁও ক্যাঁও ’ করে বিচিত্র আওয়াজ করে এবার একদম স্থির হয়ে গেলো পাখা ! সব্বোনাশ ! এদিকে গরমে বস্ত্র উন্মোচন কত্তে কত্তে অন্তিম বস্ত্রখন্ডটিতে এসে পড়েছি । এরপর আর যাওয়া যাবে না ,গেলে তা সভ্যতার পরিপন্থী হবে ব্যাপারটা । অগত্যা আমাদের গ্রীষ্মকালীন জাতীয় ( সধারনতঃ পুং) পোষাক বারমুডা নামক বিচিত্রদর্শন কটিবস্ত্রটি পরেই ছোটাছুটি – দৌড়া দৌড়ি লাঠি দিয়ে ,ঝুল ঝাড়া দিয়ে পাখাটার ওপর ঝাঁপিয়ে পরলাম – কৃত্রিম উপায় ঘুরিয়ে দিয়ে অনেক সময় চলতে শুরু করে সেই আশায় । অনেকটা ঠেলে গাড়ি স্টার্ট করার মতো । কিন্তু নাঃ ,নট নড়ন চড়ন । এরকম অভিজ্ঞতা আপনাদের হয়েছে কিনা জানিনা ,তবে না হয়ে থাকলে আপনার ভাগ্য প্রসন্ন । এই যেমন সুন্দর করে গন্ধ-সাবান দিয়ে স্নান সেরে গরমে পরার উপযুক্ত হাল্কা রঙএর পোষাক গায়ে চাপিয়েছেন কি চাপাননি – দুর্যোগের মত পাওয়ার কাট ! ব্যাস , কুল কুল করে বিভিন্ন শারীরিক সোঁতা বেয়ে ঘামের ধারা নেমে আসতে শুরু করলো , এমন নয় যে