Skip to main content

ভোট-ভাটিং (পর্ব ২)

                                                     
আপনাদের মধ্যে বাংলা সিনেমা কে কে দেখেন ? ধরে নিচ্ছি অনেকেই দেখেন । কিছুদিন আগে “২২শে শ্রাবণ” নামে একটা সিনেমা রিলিজ হয়েছিলো না ! যার গানগুলো বেশ ভালো । তাতে এক জায়াগায় একটা সিনে ছিলো এক পাগল কবি তার অনেকদিনের চাকরকে জিজ্ঞাসা করেছিলো “ এই বলতো গনতন্ত্র মানে কি ?” সে কিছুক্ষন ভেবে উত্তর দেয় “ ওই যে , পাঁচবছর পর পর একবার ভোট হয়”
ঠিকইতো “গনতন্ত্র” মানে আমাদের কাছে তো তাই ! তাইনা ? পাঁচবছরে একবার করে ভোট হবে , টিভিতে , পেপারে হাওয়া গরম করবে , কে কোন দলের হয়ে দাঁড়াবে নতুন ,কারা কত তারকাকে মাঠে নামাতে পারবে( আহা ‘সমাজসেবা’র যেন এই একটাই উপায়!এতদিন কোথায় ছিলি ভাই!) – এইসব । তারপর ছুটির মুডে একদিন ভোট দিতে যাওয়া , ফল প্রকাশের দিন টি-২০ ক্রিকেট ম্যাচের আমেজে কার কি রেজাল্ট হলো তার উত্তেজনা তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করে পরদিন অফিসে,আড্ডায়, চায়ের ঠেকে উদ্দাম তর্ক । একটু আশপাশ দেখে নিয়ে সমালোচনা ব্যাস – এই আমাদের গনতন্ত্র ! মিছিলে-মিটিং অনেকেই যায় , সেতো ‘অমুক’দা বলেছে বলেইনা ! সঙ্গে জড়িয়ে থাকে নিজস্ব কিছু হিসেব নিকেশ । ওই ‘ছোট’ হিসেবগুলো থেকে একটু বেড়িয়ে আসুন জনার্দন(জনতা)বাবু একটু ‘বড়’ করে চিন্তা করুন । যেখানে আপনিই মালিক সেখানে কিনা অল্প বখসিসেই আলহাদে আটখানা হচ্ছেন! পুরোটাই যে আপনার !
হিসেব নিকেশ আরো আছে , কোন পার্টি কত টাকা ওড়াচ্ছে ভোটের বাজারে - তার হিসেব । সে টাকার উৎস কি তার হিসেব , কাদের কত ‘দাগী’প্রার্থি তার হিসেবও । এসোসিয়েসন ওফ ডেমক্রাটিক রিফর্মস(ADR) বলছে প্রায় প্রতিটি মূল রাজনৈতিক দল গড়ে ৩০% এমন প্রার্থিদের মনোনয়ন দিয়েছে যাদের নামে ক্রিমিনাল কেস রয়েছে ! এবং সমীক্ষা বলছে এটা তারা করেই থাকে কারন তুলনায় সৎ প্রার্থির থেকে নাকি এনাদের জয়ী হওয়ার মাত্রা অন্তত তিনগুন বেশী ! বোঝো কান্ড ! তা এরকম সুযোগ কেইবা হাতছাড়া করতে চাইবে ? তাই যত দিন যাবে ততো ‘দাগী’দের সংখ্যা বাড়বে ,কারন আমরা ,ভোটাররা এদের দুহাত তুলে আশীর্বাদ করবো ! তাহলে আর নাকে কান্না কেঁদে কি হবে !
টিভিতে ‘নতুন’কার্টুনের ঠেলায় আপনার নাবালোক ছেলেও শিখে গেছে “আবকিবার ওমুক সরকার...” ব্যাস ,আর কি চাই ! এরকম বড় দলেরা সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েছে নিজেকে বিজ্ঞাপিত করতে , ঠিকইতো ,টিভি বিজ্ঞাপন ছাড়া ‘মাল’ বিক্রি হয়! বাজার চালু ‘ভোট-ভবিষৎ’ গনৎকারেরাও অদ্ভুত দক্ষতায় বড় মিডিয়ায় বলে দিচ্ছে জনগন কাকে বেশী ভোট দেবে ,কতটা দেবে, কে কত আসন পেতে পারে । বুঝুন কেসখানা ! পরীক্ষাই হলোনা রেজাল্ট আউট ! আপনার গোপন ভোটেচ্ছার কথা আগে ভাগেই জেনে গেলো বিশেষজ্ঞরা। অবশ্য এদের ভবিষ্যৎবানী চরম ফেল করার ইতিহাসও আছে , সেই ফেল করানোর জন্য দায়ী ছিলেন আপনি , দেশের জনগন । এবার তাহলে ভেবে দেখুন ওই একটা ভোটের কি মাহাত্য !
সেই জন্যই তো ভোটেরদিন মদের দোকান বন্ধ রাখতে হয় , ইলেকশন কমিশনকে নজর রাখতে হয় ভোটারদের কেউ টাকা দিচ্ছে নাকি ভোট কেনার জন্য । খাওয়াদাওয়া ছাড়াও টুপাইসের লোভে পড়ে যদি ভোট বিক্রি করেন সেটা হবে ঘাটেকা সওদা । কারন যা তারা দেবে , তার বহুগুন উসুল করবে আপনার সম্মতি নিয়েই ,তাই দায় আপনার ।আঙ্গুল তোলার যো নেই ! ভাবছেন এতসব জেনে আমার কি হবে ! আমিতো  ভোট দেব আমার শহরে/গ্রামে/এলাকায় ! নাঃ মশাই , এ ভোটটা বড় ভোট , এ আপনার পাড়ার কাউন্সিলর নির্বাচন নয় , তাই একটু জানতে তো হবে বইকি । এর ওপর নির্ভর করছে এই দেশের আগামী পাঁচবছর আমার –আপনার ,আমাদের সন্তানদের আগামী পাঁচ বছর এবং যার প্রভাব পড়বে তারও বহুবছর পর পর্যন্ত, তাই একটু চোখ-কান খোলা রাখুন , চোখ ও কানের সামনে নিত্য করে চলা প্রচারের বেনোজল কে একটু ছেঁকে নিন নিজের মতো করে । নেতাদের প্রতিশ্রুতি নিয়ে খিল্লি না করে ছেলের স্কুলের অংকখাতা মেলানোর মতো করে মিলিয়ে নিন হিসেব –কতয়ে  কত , কারন আমরা নিত্যনতুন প্রতিশ্রুতি শুনতে ভালবাসি বলেই ওনারাও শোনান । গতবারের নির্বাচনী ইস্তেহারের সঙ্গে এবারেরটা মিলিয়ে দেখুন শেয়াল আর কুমীর ছানার গল্প হচ্ছে নাকি ! অনেক দায়ীত্ব ভোটারের – আপনিই বস এই বিপুল খেলার ,দয়া ভিখারি নন । আরে বাবা একটু ল্যাজ তুলে দেখুন –এঁড়ে না দামড়া !

কথায় আছে ‘খ্যাপাও নিজের ভালো বোঝে’ , তাহলে ‘ভোটার’ বুঝবে না কেন? 

Comments

  1. দারুন লিখেছেন। ...........রাজনৈতিক দলগুলির কাছে ক্ষমতাই সবার উপরে ,গনতন্ত্র তাদের কাছে তুচ্ছ।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

অধর্ম

[ আমরা কেউ ধর্মে বিশ্বাস করি, কেউ হয়তো ধর্মকে পরিত্যাগ করিনি, কিন্তু ধর্ম নিয়ে মাথাও ঘামাই না, কেউ কট্টর নাস্তিক আবার কেউ বা ধর্মনিরপেক্ষ - কিন্তু একটা জায়গায় আমাদের গভীর মিল আছে, আমরা সবাই বাকস্বাধীনতায় প্রবলভাবে বিশ্বাসী। আর সেই জন্যই রাজীব হায়দার, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান, অনন্ত বিজয় দাস, নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়রা যে কথাগুলো বলতে চেয়ে প্রাণ হারালেন, সে কথাগুলো যাতে হারিয়ে না যায় তার জন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাব। ওঁদের সঙ্গে আমাদের মতাদর্শের মিল আছে কি নেই সেটা এই মুহূর্তে অবান্তর প্রশ্ন। কিন্তু মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সমর্থনে সারা বিশ্ব জুড়ে একাধিক ব্লগার কিবোর্ড নিয়ে বসেছেন, সেই লেখাগুলো সঙ্কলিত করে দেওয়া হল পাঠকদের জন্য - তালিকাটি দেখা যাবে এই ব্লগপোস্টের শেষে।]    কি বলি বলুন তো  !এমন কিছু নতুন তো বলতে পারছি না যা আগে শোনেননি বা পড়েননি । এই নির্দিষ্ট  বিষয় নিয়ে হাজার হাজার শব্দ উচ্চারিত হয়েছে , লেখা হয়েছে । কেউ কিছু একটা লিখবে ,তার মতে , তার বিশ্বাস থেকে কিংবা বলবে- অমনি ঘাড়ে পড়বে 'চাপাতি' ! বেশ নাম ডাক হয়েছে ইদানীং এই যন্ত্রটির । কুপিয়ে দিয়ে তবেই শান্তি স্

নামকে ওয়াস্তে ...

বন্ধুর বাবার নাম ‘মোনালিসা’ !! কি ! হেঁচকি উঠলো তো ? ...কিংবা পাড়ার দুই যমোজ বোনের নাম ‘ জেরক্স’  ! এই জেরক্সের ব্যাপারটা বুঝলেও  বাবার নাম মোনালিসা –এটা একটু দুর্বোধ্য ঠেকতে বাধ্য । ব্যাপার হচ্ছে –সিম্পল – বন্ধুর বাবার পার্মানেন্ট মুখভঙ্গিটা এমনই যে কিছু দাঁত সব সময়ে বেড়িয়ে থাকে ,হঠাৎ করে কেউ দেখলে বিভ্রান্ত হতে বাধ্য – উনি বুঝি হাসছেন ! কিন্তু ওনার এটাই গড়পরতা এক্সপ্রেসন ! – এই হাসি -হাসিনয় রহস্যময়তার জন্যই – মোনালিসা নামকরন । কে কবে এই যথার্ত নামকরন করেছিলো আজ আর মনে নেই ।  সব বাবাদেরই একটা করে গোপন নাম ছিলো যা একমাত্র বন্ধু মহলেই ব্যাবহার করা হতো । যেমন – ‘স্মার্ট বয়’ ‘উৎপল(দত্ত)’, ‘জেমস বন্ড’ , ‘অমরীশ পুরি’ , ‘দিলীপকুমার’, ‘নাকাবন্দি’ ...আরও কত । ছিলো বন্ধুদেরও নাম ,যেমন ‘আঁতলা (আঁতেল)’ ‘টাকলা’ ‘লেটুয়া(ল্যাটা)’ ‘কাতলা’ , ‘এল কে (লাথখোর)’... আরও কত কি ! সব কি আর মনে আছে ছাই । স্কুলে স্যারেদেরও বেশ কিছু নাম ছিলো বেশ জনপ্রিয় যথা ‘ব্রেকড্যান্স’(নেচে নেচে নানান অঙ্গভঙ্গী করে পড়াতেন বলে) বা ‘মুকেশ’(নাকি সুরে পড়াতেন বলে) **এখন হলে হয়তো ‘হিমেশ’ হতো !! না না! এসব নামকরন স্রেফ ফাজ

গ্রীষ্মযাপন

                                            মাথার ওপর সিলিংফ্যানটাকে কেউ যেন টেনে ধরেছে , ঘুরছেই না যেন ! কেমন মিন মিন করে পাক খাচ্ছে ! কিছুক্ষন পর ঠিক যা আন্দাজ করেছিলাম তাই – ‘ক্যাঁও ক্যাঁও ’ করে বিচিত্র আওয়াজ করে এবার একদম স্থির হয়ে গেলো পাখা ! সব্বোনাশ ! এদিকে গরমে বস্ত্র উন্মোচন কত্তে কত্তে অন্তিম বস্ত্রখন্ডটিতে এসে পড়েছি । এরপর আর যাওয়া যাবে না ,গেলে তা সভ্যতার পরিপন্থী হবে ব্যাপারটা । অগত্যা আমাদের গ্রীষ্মকালীন জাতীয় ( সধারনতঃ পুং) পোষাক বারমুডা নামক বিচিত্রদর্শন কটিবস্ত্রটি পরেই ছোটাছুটি – দৌড়া দৌড়ি লাঠি দিয়ে ,ঝুল ঝাড়া দিয়ে পাখাটার ওপর ঝাঁপিয়ে পরলাম – কৃত্রিম উপায় ঘুরিয়ে দিয়ে অনেক সময় চলতে শুরু করে সেই আশায় । অনেকটা ঠেলে গাড়ি স্টার্ট করার মতো । কিন্তু নাঃ ,নট নড়ন চড়ন । এরকম অভিজ্ঞতা আপনাদের হয়েছে কিনা জানিনা ,তবে না হয়ে থাকলে আপনার ভাগ্য প্রসন্ন । এই যেমন সুন্দর করে গন্ধ-সাবান দিয়ে স্নান সেরে গরমে পরার উপযুক্ত হাল্কা রঙএর পোষাক গায়ে চাপিয়েছেন কি চাপাননি – দুর্যোগের মত পাওয়ার কাট ! ব্যাস , কুল কুল করে বিভিন্ন শারীরিক সোঁতা বেয়ে ঘামের ধারা নেমে আসতে শুরু করলো , এমন নয় যে