Skip to main content

বর্ষা -নামা






কেমন প্যাচপেচে গরম দেখেছেন ! ...বর্ষাকাল এরকমই , টানা বৃষ্টি, নয়তো গুমোট গরমে একেবারে ন্যাতা হতে হবে ঘেমে ঘেমে । এখন ব্যাপার হচ্ছে সবার তো দিনের সব সময়েই বাতানুকূল থাকার সুযোগ নেই । আর এ.সি থেকে বেরলেই ব্যাস ! বিচ্ছিরি-ভাবে মনে হবে যেন নরকের দরজায় এসে গেলাম । ঘামতে ঘামতে একটু জুড়িয়ে নেওয়ার কিন্তু কিছু উপায় আমাদের উদ্ভাবনী শক্তি ঠিক খুঁজে বের করেই ... কন্ডাকটরের হাজার অনুরোধেও দরজার কাছ ছেড়ে বাসের ভিতরে না যাওয়া ।জামার হাতা একটু টেনে একটু বাড়তি জায়গা করে দেওয়া যাতে বাহুমূল বরাবর বাতাসের যাতায়াত মসৃণ হয় ।  জামার বুকের কাছটা টেনে -নামিয়ে বার বার বিচিত্র পদ্ধতিতে হাওয়া পাম্প করে ভিতরে চালান করা  - এটা বেশ কার্যকর । কেউ কেউ ঘাড়ে রুমাল রাখেন ,বেশ একটা মেজাজি মেজাজি লুক এলেও আসল কারণ হচ্ছে ঘাড় দিয়ে গড়িয়ে ঘামের পিঠ বেয়ে নামাকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং জামার কলারটিকে রক্ষা করাও কিছু শৌখিন লোকের চিন্তা ভাবনায় থাকে ।
এক সময়ে দেখতাম ব্যাঙেরা বর্ষায় বেশ উল্লসিত/উত্তেজিত হয় , এখনও হয় নিশ্চয়ই ,তবে তেমন করে ব্যাঙেদের কোরাস শুনতে পাই আর কোথায় । উল্লসিত বা উত্তেজিত আমরাও কি কম হই !  নিজের নিজের কারণ থাকে সবার ।যেমন নতুন প্রেমিক-প্রেমিকাদের ঝির ঝির বৃষ্টিতে একই ছাতার নিচে বেশ একটা রোমান্টিক ওয়াকের ইচ্ছে  হয় এ সময় স্বাভাবিক ভাবেই , সাধে কি আর কাব্যে -কল্পনায় এই মরশুম নিয়ে হেদিয়ে মরেছে কবিকুল !! মদ্যপায়ী খুশি হয় 'আবগারি' আবহাওয়া পেয়ে ! এছাড়াও রয়েছে রাত ভোর বৃষ্টির বেলায় খিচুড়ি পর্ব মিটে-টিটে গেলে...ক্রমশ বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো যখন মনে হতে থাকা বেডরুম ...বুকে হাত দিয়ে বলুন তো ! কেমন বাসি খিচুড়ির মতো স্বাদু পুরানো রগ রগে প্রেম জেগে ওঠে না কার ? রোমান্সের ওভার-ডোজে কখন মাঝ রাতের তারা ডুবে গেছে খেয়ালই নেই!  পরেরদিন সকালে  বৃষ্টি থেমে আবার বিকট গুমোট গরমের ক্রুর চক্রান্তে হাওয়া মোরগ ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে, রান্না ঘরের চিমনি ধোঁয়া কমালেও আদ্রতা কমাতে পারে না ! ... কিংবা স্নান করে বেরিয়ে অফিস যাওয়ার জন্য জামাটা পরে খাওয়ার টেবলে বসতেই পিঠে চিটে গেল তা ! ...বিরক্তি ... এদিকে অকারণেই মনে হতে লাগল টেবলে খাবার আসতে দেরী করছে , পাখাটা আস্তে ঘুরছে -ভোল্টেজ লো !... দুজনেরই মনে হতে লাগল কি সাংঘাতিক ঐতিহাসিক ভুলটি আপনি করেছেন এই প্রতিষ্ঠানে নাম লিখিয়ে !! ... কিংবা শোকাতুর হলেন এই ভেবে যে , ১০ (১৫ বা ১৮ও হতে পারে)  বছর আগে দুজনেই কেমন দুটি সম্ভাবনাকে ধ্বংস করেছিলেন বেশ আয়োজন করে !! ... না , মানে... মনে হবেই এমন বলছি না ...একটা সম্ভাবনার কথা বললাম আর কি !

বর্ষার আসা অনিবার্য ও আবশ্যিক , এই মরশুমের উপর নির্ভর করে থাকে আমাদের অর্থনীতির অনেকটাই ! বর্ষা কম -আর্থিক পরিস্থিতি নড়বরে । যদিও মধ্যবিত্তের সমস্যার সমাধান নেই ! অধিক বৃষ্টিতে ফসল নষ্ট হোক বা অনাবৃষ্টিতে কম উৎপাদন !- মধ্যবিত্তের অর্থনৈতিক পেন্ডুলাম দোদুল্যমান সব পরিস্থিতিতেই । বাজারে গিয়ে দুর্ভোগের হাত থেকে টিভিতে বিজ্ঞাপিত হনুমান চাল্লিশা যন্ত্রও আপনাকে রক্ষা করতে পারবে না ।
ছোটদের বর্ষায় বেশ মজা , বর্ষাতি গায়ে স্কুল যাওয়া আসার পথে জমে থাকা জলে লাফ থেকে রেনি ডের স্কুল ডুব এখনও বেশ আনন্দের রয়েছে এটা বেশ স্বস্তির । বর্ষারানির আগমনে প্রকৃতিও যেন উদ্বেল হয়ে পড়ে , যেখানে যতটুকু সবুজ আরও কয়েক পোঁচ সবুজে গাঢ় হয়ে ওঠে । ইলেকট্রিকের তারে শালিকটা ইচ্ছে করে ভেজে আর গা ফুলিয়ে ঝেড়ে ঝেড়ে নেয় মাঝে মধ্যে । শহরের ঘিঞ্জি জলে ডোবা রাস্তা , ডাবের খোল বা প্লাস্টিক আটকে থৈ থৈ নালার উপরে দূরে প্রবল বৃষ্টিতে , ঝোড়ো বাতসে ক্রমাগত মাথা নেড়ে যাওয়া নারকেল গাছ আজও একটু অন্যমনস্ক করে বৈকি আপনাকে !
বহুজাতিক সংস্থাও তালে থাকে 'মনসুন ডিসকাউন্ট' এর লোভ দেখিয়ে কিছু গছিয়ে দিতে ! যে যার ধান্দায় বুঝলেন কিনা ! ... ২০%...৩০%...৬০% রিবেটের মাথা ঘুরিয়ে দেওয়া অফার ! ভিজে মরশুমে আপনারও মন ভিজে উঠল,  হঠাৎ মনে হলো বাড়ির টিভিটা  বদলানো খুব জরুরি ! কিংবা পুজোর বাজারের কিছুটা এখনি সেরে রাখলে কেমন হয় ! ......
এসব নিয়েই আমাদের বর্ষা । পুরানো বাড়ির আবার কোথায় সোক করছে , উঠোনের নর্দমা জ্যাম হয়ে গেছে । এলার্জির প্রকোপ , গলা ব্যথা ,গারগল ... এন্টি এলার্জি , প্যারাসেটামল ,কাফ সিরাপের আগাম স্টক করে রাখেন একটু গোছানো গেরস্থরা । টানা গরমে হাঁস ফাস কিংবা টানা বৃষ্টিতে বিরক্ত হলেও প্রতিটা মরশুমের মতো বর্ষাও আমাদের অত্যন্ত আকাঙ্ক্ষার ঋতু ...বর্ষা না এলে নতুনরা প্রেমে পড়বে কি করে , পুরানোরাই বা রিনিউ করবে কিভাবে !






Comments

Popular posts from this blog

অধর্ম

[ আমরা কেউ ধর্মে বিশ্বাস করি, কেউ হয়তো ধর্মকে পরিত্যাগ করিনি, কিন্তু ধর্ম নিয়ে মাথাও ঘামাই না, কেউ কট্টর নাস্তিক আবার কেউ বা ধর্মনিরপেক্ষ - কিন্তু একটা জায়গায় আমাদের গভীর মিল আছে, আমরা সবাই বাকস্বাধীনতায় প্রবলভাবে বিশ্বাসী। আর সেই জন্যই রাজীব হায়দার, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান, অনন্ত বিজয় দাস, নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়রা যে কথাগুলো বলতে চেয়ে প্রাণ হারালেন, সে কথাগুলো যাতে হারিয়ে না যায় তার জন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাব। ওঁদের সঙ্গে আমাদের মতাদর্শের মিল আছে কি নেই সেটা এই মুহূর্তে অবান্তর প্রশ্ন। কিন্তু মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সমর্থনে সারা বিশ্ব জুড়ে একাধিক ব্লগার কিবোর্ড নিয়ে বসেছেন, সেই লেখাগুলো সঙ্কলিত করে দেওয়া হল পাঠকদের জন্য - তালিকাটি দেখা যাবে এই ব্লগপোস্টের শেষে।]    কি বলি বলুন তো  !এমন কিছু নতুন তো বলতে পারছি না যা আগে শোনেননি বা পড়েননি । এই নির্দিষ্ট  বিষয় নিয়ে হাজার হাজার শব্দ উচ্চারিত হয়েছে , লেখা হয়েছে । কেউ কিছু একটা লিখবে ,তার মতে , তার বিশ্বাস থেকে কিংবা বলবে- অমনি ঘাড়ে পড়বে 'চাপাতি' ! বেশ নাম ডাক হয়েছে ইদানীং এই যন্ত্রটির । কুপিয়ে দিয়ে তবেই শান্তি স্

নামকে ওয়াস্তে ...

বন্ধুর বাবার নাম ‘মোনালিসা’ !! কি ! হেঁচকি উঠলো তো ? ...কিংবা পাড়ার দুই যমোজ বোনের নাম ‘ জেরক্স’  ! এই জেরক্সের ব্যাপারটা বুঝলেও  বাবার নাম মোনালিসা –এটা একটু দুর্বোধ্য ঠেকতে বাধ্য । ব্যাপার হচ্ছে –সিম্পল – বন্ধুর বাবার পার্মানেন্ট মুখভঙ্গিটা এমনই যে কিছু দাঁত সব সময়ে বেড়িয়ে থাকে ,হঠাৎ করে কেউ দেখলে বিভ্রান্ত হতে বাধ্য – উনি বুঝি হাসছেন ! কিন্তু ওনার এটাই গড়পরতা এক্সপ্রেসন ! – এই হাসি -হাসিনয় রহস্যময়তার জন্যই – মোনালিসা নামকরন । কে কবে এই যথার্ত নামকরন করেছিলো আজ আর মনে নেই ।  সব বাবাদেরই একটা করে গোপন নাম ছিলো যা একমাত্র বন্ধু মহলেই ব্যাবহার করা হতো । যেমন – ‘স্মার্ট বয়’ ‘উৎপল(দত্ত)’, ‘জেমস বন্ড’ , ‘অমরীশ পুরি’ , ‘দিলীপকুমার’, ‘নাকাবন্দি’ ...আরও কত । ছিলো বন্ধুদেরও নাম ,যেমন ‘আঁতলা (আঁতেল)’ ‘টাকলা’ ‘লেটুয়া(ল্যাটা)’ ‘কাতলা’ , ‘এল কে (লাথখোর)’... আরও কত কি ! সব কি আর মনে আছে ছাই । স্কুলে স্যারেদেরও বেশ কিছু নাম ছিলো বেশ জনপ্রিয় যথা ‘ব্রেকড্যান্স’(নেচে নেচে নানান অঙ্গভঙ্গী করে পড়াতেন বলে) বা ‘মুকেশ’(নাকি সুরে পড়াতেন বলে) **এখন হলে হয়তো ‘হিমেশ’ হতো !! না না! এসব নামকরন স্রেফ ফাজ

গ্রীষ্মযাপন

                                            মাথার ওপর সিলিংফ্যানটাকে কেউ যেন টেনে ধরেছে , ঘুরছেই না যেন ! কেমন মিন মিন করে পাক খাচ্ছে ! কিছুক্ষন পর ঠিক যা আন্দাজ করেছিলাম তাই – ‘ক্যাঁও ক্যাঁও ’ করে বিচিত্র আওয়াজ করে এবার একদম স্থির হয়ে গেলো পাখা ! সব্বোনাশ ! এদিকে গরমে বস্ত্র উন্মোচন কত্তে কত্তে অন্তিম বস্ত্রখন্ডটিতে এসে পড়েছি । এরপর আর যাওয়া যাবে না ,গেলে তা সভ্যতার পরিপন্থী হবে ব্যাপারটা । অগত্যা আমাদের গ্রীষ্মকালীন জাতীয় ( সধারনতঃ পুং) পোষাক বারমুডা নামক বিচিত্রদর্শন কটিবস্ত্রটি পরেই ছোটাছুটি – দৌড়া দৌড়ি লাঠি দিয়ে ,ঝুল ঝাড়া দিয়ে পাখাটার ওপর ঝাঁপিয়ে পরলাম – কৃত্রিম উপায় ঘুরিয়ে দিয়ে অনেক সময় চলতে শুরু করে সেই আশায় । অনেকটা ঠেলে গাড়ি স্টার্ট করার মতো । কিন্তু নাঃ ,নট নড়ন চড়ন । এরকম অভিজ্ঞতা আপনাদের হয়েছে কিনা জানিনা ,তবে না হয়ে থাকলে আপনার ভাগ্য প্রসন্ন । এই যেমন সুন্দর করে গন্ধ-সাবান দিয়ে স্নান সেরে গরমে পরার উপযুক্ত হাল্কা রঙএর পোষাক গায়ে চাপিয়েছেন কি চাপাননি – দুর্যোগের মত পাওয়ার কাট ! ব্যাস , কুল কুল করে বিভিন্ন শারীরিক সোঁতা বেয়ে ঘামের ধারা নেমে আসতে শুরু করলো , এমন নয় যে