লাফিয়ে উঠতে গিয়ে ফটাস করে ব্যাগের স্ট্রাপ ছিঁড়ে ধপাস করে ব্যাগ রাস্তায়! অগত্যা আমাকেও হ্যাণ্ডেল্ধারি ঝুলন্তবস্থা থেকে নেমে যেতে হলো চলন্ত বাস থেকে । তারপর গোটা ছয়েক ভিড়ে উপচে বদহজম হয়ে যাওয়া বাস পেরিয়ে গেলো চূরান্ত অবজ্ঞা করে , এক স্ট্যান্ডতুতো বন্ধু আশ্বাস দিলেন ঠিক নাকি বাস পেয়ে যাবো , এদিকে আমার নাকে ঘাম জমছে বিন বিন করে ,বাদ বাকি সব ব্যাগে চালান করলেও শোয়েটার গায় , সঙ্গে উদ্বেগ , প্রায় আড়াইটে বাজছে ! সৃষ্টির ৪৬৫ নং স্টলে পাঠের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে বোধহয় এতক্ষনে । যাইহোক শেষ পর্যন্ত বাস পেলাম ,গিয়ে নামলাম বিজ্ঞান শহর পেরিয়ে । সারিবদ্ধভাবে হাঁটতে লাগলাম বাঁশের নির্দিষ্ট ব্যারিকেড দিয়ে ,মনে পড়ে গেল কেন জানি 'সিন্ড্রেলারস লিস্ট' এর কিছু দৃশ্য ! চটকা ভাঙলো ব্যারিকেডের পাশেই বই বিক্রির ১০ টাকা পিস ! ১০ টাকা পিস শুনে ! তাহলে এসে গেলাম পৃথিবীর অদ্ভুততম ,অভিনবতম মেলায় -'কলকাতা বইমেলা'য়ে ! আরো কিছুটা গিয়ে ,সুড়ঙ্গ পেরিয়ে পৌঁছলাম মুল প্রাঙ্গনে ...আঃ !
কিন্তু ভিতর ঢূকেই সেই চিরকালীন বিপত্তি ! ঠিক আমার কেমন সব গুলিয়ে গেলো ! চারিধারে মাইক আর অমাইক লোকজন , মেটাল ডিটেকটারের হার্ডল এসব দেখে কেমন ভেবড়ে গেলাম ! আর বই মেলায় আমি কবেই বা কি খূঁজে পেয়েছি ঠিক ঠাক ! এদিক ওদিক করতে করতে ,জিজ্ঞেস করতে করতে লিটল ম্যাগ প্যাভেলিয়নে পৌঁছলাম । দুপ্রান্তে দুই খাবারের দোকানে তখন ( এবং সর্বক্ষন) কাড়াকাড়ি চলছে , আমারো পেটটা গুড় গুড় করে ডেকে উঠলো ,সেই কখন দুটি ভাত পেটে দিয়েছি! আর তাছাড়া খাবার দেখলে খিদে পাওয়ার ব্যাপারটা খুব একটা অসভ্যতার মধ্যে পরেনা । কিন্তু ৪৬৫ কই , ভলেন্টিয়ার একবার পূবে আর একবার পশ্চিমে পাঠালো ,শেষে বল্লো 'ম্যাপ দেখে নিন" লে হালুয়া ! ম্যাপ ! আমি আবার কবে কলম্বাস হলুম! যাইহোক ওখানে যে ম্যাপটি দেখলাম সেটায় ৪৬৫ নেই , আবার খোঁজ , ৪৫৪ অবধি গিয়ে পুরোনো সেলসম্যানের স্বত্তাটা জেগে উঠলো ,তীব্র মনে হতে লাগলো কাছাকাছি হবেই । শেষে খুঁজে পেলাম প্যাভিলিয়নের পিছন দিকে গলির ভেতর ,আরও বিপত্তি বাইরে কোনো ফেস্টুন নেই । ঢুকেই দেখি এক কোনে সৃষ্টির স্টল , অতনু সেলসম্যানের ভুমিকায় , রোহন দাঁড়িয়ে আছে ,কথা বলছে চশমা পরা এক মহিলার সঙ্গে ,পরে জানলাম উনি 'অবান্তর' লেখিকা কুন্তলা । কিন্তু দুর্ভাগ্য পাঠের অনুষ্ঠান শেষ ! কি আর করা কিছুক্ষন মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম । রোহন আর অতনু কাউণ্টারে লড়ে যাচ্ছে , সঙ্গে আরও একটি ছেলে । বই দিব্যি বিক্রি হচ্ছে , বরং ওই স্টলের বাকি ভারাটেদের থেকে বেশী লোক এখানে , আহা! এ সুখকর দৃশ্যের তুলনা হয়না । আলাপ হতে লাগলো শৌভিক,তন্ময়ের সঙ্গে । শৌভিককে ফেসবুকে বরং বেশী বয়স্ক মনে হয় , দারুন ছেলে । আরো অনেকের সঙ্গে দেখা হলো যেমন কৌশিক ভাদুরীদার সঙ্গে ,আমার অনেকদিনের পরিচিত ও আমার বইয়ের প্রথমদিকের পাঠ প্রতিক্রীয়া জানিয়েছিলেন উনি , খুব কাছের মানুষ উনি ।
ইতিমধ্যে একজন মহিলা এলেন ও রোহনকে তুইতোকারি করতে লাগলো ,পরিচিত হলাম ইনিই শ্রীদর্শীনি ! যাক ,লেখার সঙ্গে পরিচয় ছিলোই ,এবার লেখককে সামনাসামনি দেখলাম -পরিচিত হলাম ,এই লোভেইতো আসা ! মাঝে একবার বেরোলাম 'আগামীকাল'এর স্টলে যাব বলে ।খুঁজে পেতে গেলামও ,অভিক আছে । ঝক ঝকে স্টল ,দুরন্ত সাজানো গোছানো । নাঃ ঘনাদা নেই সেখানে । আসার পথে লিটল ম্যাগের প্যাভেলিয়নে অতনুদার সঙ্গে দেখা হলো কথা হলো ।অংশুমান সহ 'দলছুট' খুঁজে পেলাম না । এদিকে কিছু একটা আন্দাজ করে 'আগামীকাল'সম্পাদক আমি ঢুকতেই শ্বশুরমশাইয়ের সংগে আলাপ করিয়ে দিয়ে ওনাকে বগলদাবা করে কোথায় হাপিস হয়ে গেলো । সম্পাদকদের কত সতর্ক থাকতে হয়!
যাইহোক কিছুক্ষন বসে থেকে স্টলের ছেলে গুলোর সঙ্গে গল্প করলাম ,এর মাঝে সম্বিত বসু এলো-চলেও গেলো , আমায় চেনে না , আমিও আন্দাজে পরে জিজ্ঞেস করতে দোকানের ছেলেগুলো বল্লো আমি ঠিক ধরেছি ।একটা ঝক ঝকে 'আগামীকাল' সঙ্গে নিয়ে ফিরতে লাগলাম ,ভিড় আরো বাড়ছে , ওদিকে 'একলাঘর ...শুনতে পাচ্ছি মাইকে । পেরুর প্যাভেলিয়নে লাইন , কে জানে কি আছে ওখানে ,দেজ এ লাইন...
খেতে গিয়ে ভিরমি খাওয়ার জোগার ! স্প্রিংরোল ৪০,চিকেন স্যান্ডুইচ ৬০... কফি ১৫ ...
৪৬৫ তে ফিরে দেখি রোহনের মা বাবা ,লিপি সবাই হাজির ! এরকম পরিবার ভারতে কটা আছে কে জানে ! গোটা পরিবার ঝাঁপিয়ে পড়েছে মেলায় ''সৃষ্টি'র প্রকাশনাকে সফল করতে আর আমাদের মতো অপরিচিত লেখকদের সৃষ্টিকে তুলে ধরতে অক্লান্তভাবে ! দেখি আর অবাক হই । ইতিমধ্যে সুবীরদা কন্যাসহ হাজির ,কিছু পরেই এলেন যশোধরাদি , সন্ধ্যায় 'সৃষ্টি'র স্টল জমে ক্ষীর ! চাঁদের হাট বসেছে । অতনুর অর্ধাঙ্গীনির সঙ্গে পরিচিত হলাম । বেলা বাড়ছে ,একসময়ে একা কুম্ভের মতো রোহনকে একা ফেলে ফিরতে লাগলাম ,আমায় যে ১০০+ কিমি যেতে হবে আবার !গেটের কাছে দেখা শুদ্ধর সাথে ,জড়িয়ে ধরলাম ,একবার ভাবলাম ওর চুলটা টেনে দেখি পরচুলো কিনা ।
হাঁটছি হাঁটছি ...বর্তমান ভবন পেরিয়ে গিয়েছি ,পুলিশ বলছে আরো এগোন! সেকিরে ! আরো কিছুটা গেলে যে উল্টোডাঙ্গা পৌঁছে যাবো !
ফেরার বাসে ওঠার আগে অন্ধকার করুনাময়ী বাস স্ট্যাণ্ডে দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম কি আশ্চর্য এই মেলা ! কি আশ্চর্য লোকের জমায়েত ! যেদিকে তাকাই চোখ ধাঁধিয়েদেওয়া বইয়ের সম্ভার! এ বোধহয় কলকাতা বইমেলাতেই সম্ভব ,তাই বোধহয় এত কষ্ট করেও বহু দূর দূর থেকে লোকে আসে । ইতিমধ্যে বাস নিউটাঊনের আলোকিত রাস্তা চিরে আমায় নিয়ে ফিরে চলেছে বাড়ির দিকে...
কিন্তু ভিতর ঢূকেই সেই চিরকালীন বিপত্তি ! ঠিক আমার কেমন সব গুলিয়ে গেলো ! চারিধারে মাইক আর অমাইক লোকজন , মেটাল ডিটেকটারের হার্ডল এসব দেখে কেমন ভেবড়ে গেলাম ! আর বই মেলায় আমি কবেই বা কি খূঁজে পেয়েছি ঠিক ঠাক ! এদিক ওদিক করতে করতে ,জিজ্ঞেস করতে করতে লিটল ম্যাগ প্যাভেলিয়নে পৌঁছলাম । দুপ্রান্তে দুই খাবারের দোকানে তখন ( এবং সর্বক্ষন) কাড়াকাড়ি চলছে , আমারো পেটটা গুড় গুড় করে ডেকে উঠলো ,সেই কখন দুটি ভাত পেটে দিয়েছি! আর তাছাড়া খাবার দেখলে খিদে পাওয়ার ব্যাপারটা খুব একটা অসভ্যতার মধ্যে পরেনা । কিন্তু ৪৬৫ কই , ভলেন্টিয়ার একবার পূবে আর একবার পশ্চিমে পাঠালো ,শেষে বল্লো 'ম্যাপ দেখে নিন" লে হালুয়া ! ম্যাপ ! আমি আবার কবে কলম্বাস হলুম! যাইহোক ওখানে যে ম্যাপটি দেখলাম সেটায় ৪৬৫ নেই , আবার খোঁজ , ৪৫৪ অবধি গিয়ে পুরোনো সেলসম্যানের স্বত্তাটা জেগে উঠলো ,তীব্র মনে হতে লাগলো কাছাকাছি হবেই । শেষে খুঁজে পেলাম প্যাভিলিয়নের পিছন দিকে গলির ভেতর ,আরও বিপত্তি বাইরে কোনো ফেস্টুন নেই । ঢুকেই দেখি এক কোনে সৃষ্টির স্টল , অতনু সেলসম্যানের ভুমিকায় , রোহন দাঁড়িয়ে আছে ,কথা বলছে চশমা পরা এক মহিলার সঙ্গে ,পরে জানলাম উনি 'অবান্তর' লেখিকা কুন্তলা । কিন্তু দুর্ভাগ্য পাঠের অনুষ্ঠান শেষ ! কি আর করা কিছুক্ষন মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম । রোহন আর অতনু কাউণ্টারে লড়ে যাচ্ছে , সঙ্গে আরও একটি ছেলে । বই দিব্যি বিক্রি হচ্ছে , বরং ওই স্টলের বাকি ভারাটেদের থেকে বেশী লোক এখানে , আহা! এ সুখকর দৃশ্যের তুলনা হয়না । আলাপ হতে লাগলো শৌভিক,তন্ময়ের সঙ্গে । শৌভিককে ফেসবুকে বরং বেশী বয়স্ক মনে হয় , দারুন ছেলে । আরো অনেকের সঙ্গে দেখা হলো যেমন কৌশিক ভাদুরীদার সঙ্গে ,আমার অনেকদিনের পরিচিত ও আমার বইয়ের প্রথমদিকের পাঠ প্রতিক্রীয়া জানিয়েছিলেন উনি , খুব কাছের মানুষ উনি ।
ইতিমধ্যে একজন মহিলা এলেন ও রোহনকে তুইতোকারি করতে লাগলো ,পরিচিত হলাম ইনিই শ্রীদর্শীনি ! যাক ,লেখার সঙ্গে পরিচয় ছিলোই ,এবার লেখককে সামনাসামনি দেখলাম -পরিচিত হলাম ,এই লোভেইতো আসা ! মাঝে একবার বেরোলাম 'আগামীকাল'এর স্টলে যাব বলে ।খুঁজে পেতে গেলামও ,অভিক আছে । ঝক ঝকে স্টল ,দুরন্ত সাজানো গোছানো । নাঃ ঘনাদা নেই সেখানে । আসার পথে লিটল ম্যাগের প্যাভেলিয়নে অতনুদার সঙ্গে দেখা হলো কথা হলো ।অংশুমান সহ 'দলছুট' খুঁজে পেলাম না । এদিকে কিছু একটা আন্দাজ করে 'আগামীকাল'সম্পাদক আমি ঢুকতেই শ্বশুরমশাইয়ের সংগে আলাপ করিয়ে দিয়ে ওনাকে বগলদাবা করে কোথায় হাপিস হয়ে গেলো । সম্পাদকদের কত সতর্ক থাকতে হয়!
যাইহোক কিছুক্ষন বসে থেকে স্টলের ছেলে গুলোর সঙ্গে গল্প করলাম ,এর মাঝে সম্বিত বসু এলো-চলেও গেলো , আমায় চেনে না , আমিও আন্দাজে পরে জিজ্ঞেস করতে দোকানের ছেলেগুলো বল্লো আমি ঠিক ধরেছি ।একটা ঝক ঝকে 'আগামীকাল' সঙ্গে নিয়ে ফিরতে লাগলাম ,ভিড় আরো বাড়ছে , ওদিকে 'একলাঘর ...শুনতে পাচ্ছি মাইকে । পেরুর প্যাভেলিয়নে লাইন , কে জানে কি আছে ওখানে ,দেজ এ লাইন...
খেতে গিয়ে ভিরমি খাওয়ার জোগার ! স্প্রিংরোল ৪০,চিকেন স্যান্ডুইচ ৬০... কফি ১৫ ...
৪৬৫ তে ফিরে দেখি রোহনের মা বাবা ,লিপি সবাই হাজির ! এরকম পরিবার ভারতে কটা আছে কে জানে ! গোটা পরিবার ঝাঁপিয়ে পড়েছে মেলায় ''সৃষ্টি'র প্রকাশনাকে সফল করতে আর আমাদের মতো অপরিচিত লেখকদের সৃষ্টিকে তুলে ধরতে অক্লান্তভাবে ! দেখি আর অবাক হই । ইতিমধ্যে সুবীরদা কন্যাসহ হাজির ,কিছু পরেই এলেন যশোধরাদি , সন্ধ্যায় 'সৃষ্টি'র স্টল জমে ক্ষীর ! চাঁদের হাট বসেছে । অতনুর অর্ধাঙ্গীনির সঙ্গে পরিচিত হলাম । বেলা বাড়ছে ,একসময়ে একা কুম্ভের মতো রোহনকে একা ফেলে ফিরতে লাগলাম ,আমায় যে ১০০+ কিমি যেতে হবে আবার !গেটের কাছে দেখা শুদ্ধর সাথে ,জড়িয়ে ধরলাম ,একবার ভাবলাম ওর চুলটা টেনে দেখি পরচুলো কিনা ।
হাঁটছি হাঁটছি ...বর্তমান ভবন পেরিয়ে গিয়েছি ,পুলিশ বলছে আরো এগোন! সেকিরে ! আরো কিছুটা গেলে যে উল্টোডাঙ্গা পৌঁছে যাবো !
ফেরার বাসে ওঠার আগে অন্ধকার করুনাময়ী বাস স্ট্যাণ্ডে দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম কি আশ্চর্য এই মেলা ! কি আশ্চর্য লোকের জমায়েত ! যেদিকে তাকাই চোখ ধাঁধিয়েদেওয়া বইয়ের সম্ভার! এ বোধহয় কলকাতা বইমেলাতেই সম্ভব ,তাই বোধহয় এত কষ্ট করেও বহু দূর দূর থেকে লোকে আসে । ইতিমধ্যে বাস নিউটাঊনের আলোকিত রাস্তা চিরে আমায় নিয়ে ফিরে চলেছে বাড়ির দিকে...
Comments
Post a Comment