Skip to main content

বইমেলা সাফারি ১লা ফেব্রু ২০১৪

লাফিয়ে উঠতে গিয়ে ফটাস করে ব্যাগের স্ট্রাপ ছিঁড়ে ধপাস করে ব্যাগ রাস্তায়! অগত্যা আমাকেও হ্যাণ্ডেল্ধারি ঝুলন্তবস্থা থেকে নেমে যেতে হলো চলন্ত বাস থেকে । তারপর গোটা ছয়েক ভিড়ে উপচে বদহজম হয়ে যাওয়া বাস পেরিয়ে গেলো চূরান্ত অবজ্ঞা করে , এক স্ট্যান্ডতুতো বন্ধু আশ্বাস দিলেন ঠিক নাকি বাস পেয়ে যাবো , এদিকে আমার নাকে ঘাম জমছে বিন বিন করে ,বাদ বাকি সব ব্যাগে চালান করলেও শোয়েটার গায় , সঙ্গে উদ্বেগ , প্রায় আড়াইটে বাজছে ! সৃষ্টির ৪৬৫ নং স্টলে পাঠের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে বোধহয় এতক্ষনে । যাইহোক শেষ পর্যন্ত বাস পেলাম ,গিয়ে নামলাম বিজ্ঞান শহর পেরিয়ে । সারিবদ্ধভাবে হাঁটতে লাগলাম বাঁশের নির্দিষ্ট ব্যারিকেড দিয়ে ,মনে পড়ে গেল কেন জানি 'সিন্ড্রেলারস লিস্ট' এর কিছু দৃশ্য ! চটকা ভাঙলো ব্যারিকেডের পাশেই বই বিক্রির ১০ টাকা পিস ! ১০ টাকা পিস শুনে ! তাহলে এসে গেলাম পৃথিবীর অদ্ভুততম ,অভিনবতম মেলায় -'কলকাতা বইমেলা'য়ে ! আরো কিছুটা গিয়ে ,সুড়ঙ্গ পেরিয়ে পৌঁছলাম মুল প্রাঙ্গনে ...আঃ !

কিন্তু ভিতর ঢূকেই সেই চিরকালীন বিপত্তি ! ঠিক আমার কেমন সব গুলিয়ে গেলো ! চারিধারে মাইক আর অমাইক লোকজন , মেটাল ডিটেকটারের হার্ডল এসব দেখে কেমন ভেবড়ে গেলাম ! আর বই মেলায় আমি কবেই বা কি খূঁজে পেয়েছি ঠিক ঠাক ! এদিক ওদিক করতে করতে ,জিজ্ঞেস করতে করতে লিটল ম্যাগ প্যাভেলিয়নে পৌঁছলাম । দুপ্রান্তে দুই খাবারের দোকানে তখন ( এবং সর্বক্ষন) কাড়াকাড়ি চলছে , আমারো পেটটা গুড় গুড় করে ডেকে উঠলো ,সেই কখন দুটি ভাত পেটে দিয়েছি! আর তাছাড়া খাবার দেখলে খিদে পাওয়ার ব্যাপারটা খুব একটা অসভ্যতার মধ্যে পরেনা । কিন্তু ৪৬৫ কই , ভলেন্টিয়ার একবার পূবে আর একবার পশ্চিমে পাঠালো ,শেষে বল্লো 'ম্যাপ দেখে নিন" লে হালুয়া ! ম্যাপ ! আমি আবার কবে কলম্বাস হলুম! যাইহোক ওখানে যে ম্যাপটি দেখলাম সেটায় ৪৬৫ নেই , আবার খোঁজ , ৪৫৪ অবধি গিয়ে পুরোনো সেলসম্যানের স্বত্তাটা জেগে উঠলো ,তীব্র মনে হতে লাগলো কাছাকাছি হবেই । শেষে খুঁজে পেলাম প্যাভিলিয়নের পিছন দিকে গলির ভেতর ,আরও বিপত্তি বাইরে কোনো ফেস্টুন নেই । ঢুকেই দেখি এক কোনে সৃষ্টির স্টল , অতনু সেলসম্যানের ভুমিকায় , রোহন দাঁড়িয়ে আছে ,কথা বলছে চশমা পরা এক মহিলার সঙ্গে ,পরে জানলাম উনি 'অবান্তর' লেখিকা কুন্তলা । কিন্তু দুর্ভাগ্য পাঠের অনুষ্ঠান শেষ ! কি আর করা কিছুক্ষন মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম । রোহন আর অতনু কাউণ্টারে লড়ে যাচ্ছে , সঙ্গে আরও একটি ছেলে । বই দিব্যি বিক্রি হচ্ছে , বরং ওই স্টলের বাকি ভারাটেদের থেকে বেশী লোক এখানে , আহা! এ সুখকর দৃশ্যের তুলনা হয়না । আলাপ হতে লাগলো শৌভিক,তন্ময়ের সঙ্গে । শৌভিককে ফেসবুকে বরং বেশী বয়স্ক মনে হয় , দারুন ছেলে । আরো অনেকের সঙ্গে দেখা হলো যেমন কৌশিক ভাদুরীদার সঙ্গে ,আমার অনেকদিনের পরিচিত ও আমার বইয়ের প্রথমদিকের পাঠ প্রতিক্রীয়া জানিয়েছিলেন উনি , খুব কাছের মানুষ উনি ।

ইতিমধ্যে একজন মহিলা এলেন ও রোহনকে তুইতোকারি করতে লাগলো ,পরিচিত হলাম ইনিই শ্রীদর্শীনি ! যাক ,লেখার সঙ্গে পরিচয় ছিলোই ,এবার লেখককে সামনাসামনি দেখলাম -পরিচিত হলাম ,এই লোভেইতো আসা ! মাঝে একবার বেরোলাম 'আগামীকাল'এর স্টলে যাব বলে ।খুঁজে পেতে গেলামও ,অভিক আছে । ঝক ঝকে স্টল ,দুরন্ত সাজানো গোছানো । নাঃ ঘনাদা নেই সেখানে । আসার পথে লিটল ম্যাগের প্যাভেলিয়নে অতনুদার সঙ্গে দেখা হলো কথা হলো ।অংশুমান সহ 'দলছুট' খুঁজে পেলাম না । এদিকে কিছু একটা আন্দাজ করে 'আগামীকাল'সম্পাদক আমি ঢুকতেই শ্বশুরমশাইয়ের সংগে আলাপ করিয়ে দিয়ে ওনাকে বগলদাবা করে কোথায় হাপিস হয়ে গেলো । সম্পাদকদের কত সতর্ক থাকতে হয়!

যাইহোক কিছুক্ষন বসে থেকে স্টলের ছেলে গুলোর সঙ্গে গল্প করলাম ,এর মাঝে সম্বিত বসু এলো-চলেও গেলো , আমায় চেনে না , আমিও আন্দাজে পরে জিজ্ঞেস করতে দোকানের ছেলেগুলো বল্লো আমি ঠিক ধরেছি ।একটা ঝক ঝকে 'আগামীকাল' সঙ্গে নিয়ে ফিরতে লাগলাম ,ভিড় আরো বাড়ছে , ওদিকে 'একলাঘর ...শুনতে পাচ্ছি মাইকে । পেরুর প্যাভেলিয়নে লাইন , কে জানে কি আছে ওখানে ,দেজ এ লাইন...
খেতে গিয়ে ভিরমি খাওয়ার জোগার ! স্প্রিংরোল ৪০,চিকেন স্যান্ডুইচ ৬০... কফি ১৫ ...

৪৬৫ তে ফিরে দেখি রোহনের মা বাবা ,লিপি সবাই হাজির ! এরকম পরিবার ভারতে কটা আছে কে জানে ! গোটা পরিবার ঝাঁপিয়ে পড়েছে মেলায় ''সৃষ্টি'র প্রকাশনাকে সফল করতে আর আমাদের মতো অপরিচিত লেখকদের সৃষ্টিকে তুলে ধরতে অক্লান্তভাবে ! দেখি আর অবাক হই । ইতিমধ্যে সুবীরদা কন্যাসহ হাজির ,কিছু পরেই এলেন যশোধরাদি , সন্ধ্যায় 'সৃষ্টি'র স্টল জমে ক্ষীর ! চাঁদের হাট বসেছে । অতনুর অর্ধাঙ্গীনির সঙ্গে পরিচিত হলাম । বেলা বাড়ছে ,একসময়ে একা কুম্ভের মতো রোহনকে একা ফেলে ফিরতে লাগলাম ,আমায় যে ১০০+ কিমি যেতে হবে আবার !গেটের কাছে দেখা শুদ্ধর সাথে ,জড়িয়ে ধরলাম ,একবার ভাবলাম ওর চুলটা টেনে দেখি পরচুলো কিনা ।
হাঁটছি হাঁটছি ...বর্তমান ভবন পেরিয়ে গিয়েছি ,পুলিশ বলছে আরো এগোন! সেকিরে ! আরো কিছুটা গেলে যে উল্টোডাঙ্গা পৌঁছে যাবো !

ফেরার বাসে ওঠার আগে অন্ধকার করুনাময়ী বাস স্ট্যাণ্ডে দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম কি আশ্চর্য এই মেলা ! কি আশ্চর্য লোকের জমায়েত ! যেদিকে তাকাই চোখ ধাঁধিয়েদেওয়া বইয়ের সম্ভার! এ বোধহয় কলকাতা বইমেলাতেই সম্ভব ,তাই বোধহয় এত কষ্ট করেও বহু দূর দূর থেকে লোকে আসে । ইতিমধ্যে বাস নিউটাঊনের আলোকিত রাস্তা চিরে আমায় নিয়ে ফিরে চলেছে বাড়ির দিকে...

Comments

Popular posts from this blog

অধর্ম

[ আমরা কেউ ধর্মে বিশ্বাস করি, কেউ হয়তো ধর্মকে পরিত্যাগ করিনি, কিন্তু ধর্ম নিয়ে মাথাও ঘামাই না, কেউ কট্টর নাস্তিক আবার কেউ বা ধর্মনিরপেক্ষ - কিন্তু একটা জায়গায় আমাদের গভীর মিল আছে, আমরা সবাই বাকস্বাধীনতায় প্রবলভাবে বিশ্বাসী। আর সেই জন্যই রাজীব হায়দার, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান, অনন্ত বিজয় দাস, নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়রা যে কথাগুলো বলতে চেয়ে প্রাণ হারালেন, সে কথাগুলো যাতে হারিয়ে না যায় তার জন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাব। ওঁদের সঙ্গে আমাদের মতাদর্শের মিল আছে কি নেই সেটা এই মুহূর্তে অবান্তর প্রশ্ন। কিন্তু মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সমর্থনে সারা বিশ্ব জুড়ে একাধিক ব্লগার কিবোর্ড নিয়ে বসেছেন, সেই লেখাগুলো সঙ্কলিত করে দেওয়া হল পাঠকদের জন্য - তালিকাটি দেখা যাবে এই ব্লগপোস্টের শেষে।]    কি বলি বলুন তো  !এমন কিছু নতুন তো বলতে পারছি না যা আগে শোনেননি বা পড়েননি । এই নির্দিষ্ট  বিষয় নিয়ে হাজার হাজার শব্দ উচ্চারিত হয়েছে , লেখা হয়েছে । কেউ কিছু একটা লিখবে ,তার মতে , তার বিশ্বাস থেকে কিংবা বলবে- অমনি ঘাড়ে পড়বে 'চাপাতি' ! বেশ নাম ডাক হয়েছে ইদানীং এই যন্ত্রটির । কুপিয়ে দিয়ে তবেই শান্তি স্

নামকে ওয়াস্তে ...

বন্ধুর বাবার নাম ‘মোনালিসা’ !! কি ! হেঁচকি উঠলো তো ? ...কিংবা পাড়ার দুই যমোজ বোনের নাম ‘ জেরক্স’  ! এই জেরক্সের ব্যাপারটা বুঝলেও  বাবার নাম মোনালিসা –এটা একটু দুর্বোধ্য ঠেকতে বাধ্য । ব্যাপার হচ্ছে –সিম্পল – বন্ধুর বাবার পার্মানেন্ট মুখভঙ্গিটা এমনই যে কিছু দাঁত সব সময়ে বেড়িয়ে থাকে ,হঠাৎ করে কেউ দেখলে বিভ্রান্ত হতে বাধ্য – উনি বুঝি হাসছেন ! কিন্তু ওনার এটাই গড়পরতা এক্সপ্রেসন ! – এই হাসি -হাসিনয় রহস্যময়তার জন্যই – মোনালিসা নামকরন । কে কবে এই যথার্ত নামকরন করেছিলো আজ আর মনে নেই ।  সব বাবাদেরই একটা করে গোপন নাম ছিলো যা একমাত্র বন্ধু মহলেই ব্যাবহার করা হতো । যেমন – ‘স্মার্ট বয়’ ‘উৎপল(দত্ত)’, ‘জেমস বন্ড’ , ‘অমরীশ পুরি’ , ‘দিলীপকুমার’, ‘নাকাবন্দি’ ...আরও কত । ছিলো বন্ধুদেরও নাম ,যেমন ‘আঁতলা (আঁতেল)’ ‘টাকলা’ ‘লেটুয়া(ল্যাটা)’ ‘কাতলা’ , ‘এল কে (লাথখোর)’... আরও কত কি ! সব কি আর মনে আছে ছাই । স্কুলে স্যারেদেরও বেশ কিছু নাম ছিলো বেশ জনপ্রিয় যথা ‘ব্রেকড্যান্স’(নেচে নেচে নানান অঙ্গভঙ্গী করে পড়াতেন বলে) বা ‘মুকেশ’(নাকি সুরে পড়াতেন বলে) **এখন হলে হয়তো ‘হিমেশ’ হতো !! না না! এসব নামকরন স্রেফ ফাজ

গ্রীষ্মযাপন

                                            মাথার ওপর সিলিংফ্যানটাকে কেউ যেন টেনে ধরেছে , ঘুরছেই না যেন ! কেমন মিন মিন করে পাক খাচ্ছে ! কিছুক্ষন পর ঠিক যা আন্দাজ করেছিলাম তাই – ‘ক্যাঁও ক্যাঁও ’ করে বিচিত্র আওয়াজ করে এবার একদম স্থির হয়ে গেলো পাখা ! সব্বোনাশ ! এদিকে গরমে বস্ত্র উন্মোচন কত্তে কত্তে অন্তিম বস্ত্রখন্ডটিতে এসে পড়েছি । এরপর আর যাওয়া যাবে না ,গেলে তা সভ্যতার পরিপন্থী হবে ব্যাপারটা । অগত্যা আমাদের গ্রীষ্মকালীন জাতীয় ( সধারনতঃ পুং) পোষাক বারমুডা নামক বিচিত্রদর্শন কটিবস্ত্রটি পরেই ছোটাছুটি – দৌড়া দৌড়ি লাঠি দিয়ে ,ঝুল ঝাড়া দিয়ে পাখাটার ওপর ঝাঁপিয়ে পরলাম – কৃত্রিম উপায় ঘুরিয়ে দিয়ে অনেক সময় চলতে শুরু করে সেই আশায় । অনেকটা ঠেলে গাড়ি স্টার্ট করার মতো । কিন্তু নাঃ ,নট নড়ন চড়ন । এরকম অভিজ্ঞতা আপনাদের হয়েছে কিনা জানিনা ,তবে না হয়ে থাকলে আপনার ভাগ্য প্রসন্ন । এই যেমন সুন্দর করে গন্ধ-সাবান দিয়ে স্নান সেরে গরমে পরার উপযুক্ত হাল্কা রঙএর পোষাক গায়ে চাপিয়েছেন কি চাপাননি – দুর্যোগের মত পাওয়ার কাট ! ব্যাস , কুল কুল করে বিভিন্ন শারীরিক সোঁতা বেয়ে ঘামের ধারা নেমে আসতে শুরু করলো , এমন নয় যে